Adstrra

Adestrra

AdCash 267

করোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এর প্রভাব থাকবে প্রায় ১০ বছর!

করোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এর প্রভাব থাকবে প্রায় ১০ বছর! এই প্রভাব মূলত অর্থনৈতিক। ঢাকায় বাড়িভাড়া দিতে না পেরে বা কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতায় অনেকেই ঢাকা ছাড়ছেন। এটা জাস্ট টিপ অব দ্য আইসবার্গ! ক্রাইসিস আরও বাড়বে। করোনা শেষ হয়ে যাবে কিন্তু করুণার পাত্র হিসেবে রেখে যাবে বৃহৎ একটা জনগোষ্ঠীকে। কেন এরকম হচ্ছে?
বাংলাদেশের উৎপাদন নির্ভরশীলতা মূলত তৈরি পোশাককে কেন্দ্র করে। এ ছাড়া খুব কম পরিমাণে রপ্তানিমুখী ঔষধ শিল্প রয়েছে। এ দুটো ছাড়া বলার মতো আছে রেমিটেন্স যেটা স্বভাবতই করোনা মহামারির কারণে অনেকাংশে হ্রাসের দিকে। তারমানে স্বাধীনতার পর থেকে আমরা মূলত নির্ভর করে আছি এই দুটোর উপরঃ তৈরি পোশাক এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্স। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে করোনা ছাড়াও অশনি সংকেত হলো আগামী ১০-১৫ বছরে বেশিরভাগ কারখানা অটোমেশনে চলে যাবে। কারখানাগুলোতে শ্রমিকের চাহিদা কমে যাবে বিপুলভাবে। যেই সস্তা শ্রমের কারণে ইয়োরোপ আমেরিকা আমাদের পোশাক নিচ্ছে সেটা অটোমেশন চলে আসলে আর থাকবেনা। হুট করে একদিন দেখবো ইয়োরোপ আমেরিকা পোশাক আমদানি করছেনা আমাদের থেকে কারণ ওদের অটোমেটেড কারখানা এখন আরও ভালো ও সুন্দর কাপড় বানাচ্ছে। সেই একই অটোমেশনের কারণে বিদেশে শ্রমিক রপ্তানিও কমে যাবে। শ্রমিক বলতে এখানে কায়িক পরিশ্রম করা লোকবলকে বুঝিয়েছি।
আচ্ছা তাহলে উপায় কি? আমি মনে করি আমাদের প্রোডাক্ট ডাইভারসিটি খুবই কম। আমরা গত ৪০ বছর ধরে এক কাপড়ই বানিয়ে যাচ্ছি। উদাহারণ দিলেই বুঝবেন। ১৯৬২ সালে ঘানা ও থাইল্যান্ডের প্রোডাক্ট ডাইভার্সিটি ছিলো প্রায় এক। ঘানার মূল উৎপাদন ছিলো কোকো বিন আর থাইল্যান্ডের ছিলো চাল। কিন্তু ২০১০ এ এসে থাইল্যান্ডের আমূল পরিবর্তন হলো। ঘানা কোকো থেকে তেমন বের হতে না পারলেও থাইল্যান্ড চালের পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক্স, গাড়ির পার্টস, সফটওয়্যার, কেমিক্যালস সহ আরও অনেক কিছু রপ্তানিতে নিয়ে আসলো। একই কথা সাউথ কোরিয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ব্যাটারি দিয়ে তাদের রপ্তানি শুরু আর এখন কী নেই সাউথ কোরিয়ার?! ইউ জাস্ট নেম ইট এন্ড সাউথ কোরিয়া ইজ দেয়ার! চীনের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।
আমরা কিন্তু আমাদের প্রোডাক্ট ডাইভারসিফাই করতে পারিনি। তাই করোনা শেষ হওয়ার পরে আসলে আমাদের মূল যুদ্ধটা শুরু হবে। থাইল্যান্ড, সাউথ কোরিয়া কী করে করেছে? সংক্ষেপে বলতে গেলে যেটা সেটা হলো তারা জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধি করেছে। তাদের দেশের ইঞ্জিনিয়ার সহ যারা টেকনিক্যাল পড়ালেখা করেছে তাদেরকে কাজে লাগিয়েছে। আমরা পারছিনা। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ১০০ জনকে জিজ্ঞেস করেন তারা কী চায় আমি বাজি ধরবো ৮০ জন বলবে জিআরই দিয়ে বাইরে যাবো আর ১৫জন বলবে বিসিএস দিবো। কেন? কারণ আমরা পারছিনা ওদের মেধার স্ফূরণ ঘটাতে। এটা অশনি সংকেত আমাদের জন্য। ভারত ব্যাঙালুরুতে সিলিকন ভ্যালি তৈরি করেছে। ১৯৯৫ সাল থেকে ভারত সফটওয়্যার রপ্তানি করছে। আমরা কী করতে পারছি? আমাদের জাহাজ শিল্প আছে, আশাও দেখাচ্ছিলো কিন্তু ওটার কি অবস্থা এখন? প্রচুর ফ্রিল্যান্সার আছে আমাদের। কিন্তু ওদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ভিত আমরা এখনো দিতে পারছিনা। ২০৩০ সালে জনসংখ্যা হবে মিনিমাম ২৫ কোটি। আমাদের জায়গা-জমি কম। কিন্তু এই লোকবল, মানবসম্পদই আমাদের ভরসা। পুরো দুনিয়াকে আমাদের ইনভেন্টরি বানাতে চাইলে ঠিক এই মুহূর্ত থেকে কাজ শুরু করতে হবে।
আমাদের সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক অনেক জ্ঞানী পলিসিমেকাররা আছেন। আশা করছি সকল অশনি সংকেত কে আমরা দূর করতে পারবো। তবুও মনে ভয় থেকে যায়।

Comments